কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে ইরনের মিসইল হমলা || আমেরিকার উপর প্রতিশোধ নিলো ইরান || এর পর কী?
আসসালামু আলাইকুম। কিছুক্ষণ আগে কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়েছে। ইরানের মিসাইলগুলো কাতারের আকাশপথ দিয়ে প্রবেশ করে মার্কিন ঘাঁটিতে আঘাত করেছে। বলা হচ্ছে, অন্তত ১০টি মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছে, যার মধ্যে তিনটি মিসাইল লক্ষ্যভ্রষ্ট না হয়ে সরাসরি ঘাঁটিতে আঘাত হেনেছে। প্রশ্ন উঠছে, কেন এই মুহূর্তে ইরান কাতারে হামলা চালালো? কাতার তো ছিল আরব বিশ্বের মধ্যে ইরানের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর একটি, বলা যায়, সবচেয়ে ঘনিষ্ঠই। সেই রাষ্ট্রেই এখন ইরান মিসাইল হামলা চালিয়েছে।
প্রশ্ন উঠছে— কেন এতগুলো মিসাইল কাতারের আকাশ দিয়ে নিক্ষেপ করা হলো? কাতারের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কীভাবে এই মিসাইলগুলো প্রতিহত করলো, বা কতগুলো ঠেকাতে সক্ষম হলো?
এই মিসাইল হামলার মাধ্যমে ইরান আসলে কী বার্তা দিতে চাইছে? ইরান কি এই যুদ্ধকে আরও বড় পরিসরে নিয়ে যেতে চাইছে, শতভাগ প্রস্তুতি নিয়ে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে চাইছে? নাকি এটি অন্য কোনো কৌশলগত বার্তা পাঠানোর একটি পদক্ষেপ?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর যদি আপনাদের কাছে থাকে, অবশ্যই লিখে জানাবেন।
এছাড়া, কাতার থেকে আমাদের এক দর্শক, তার নিজ বাসা থেকে একটি ভিডিও পাঠিয়েছেন। সেখানে দেখা যাচ্ছে— প্রচুর পরিমাণে মিসাইল কাতারের আকাশে ছুটে যাচ্ছে। এটা এক বা দুইটা নয়, অনেকগুলো।
আপনাদের একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পরিষ্কার করে বলি — মিসাইলগুলো ইরান থেকে সরাসরি নিক্ষিপ্ত হয়নি বরং কাতারের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম পাল্টা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে ওই মিসাইলগুলো নিষ্ক্রিয় করার জন্য কাজ করেছে।
সুতরাং, আমরা বলতে পারি—কাতারের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম বেশ কিছু মিসাইল সফলভাবে ধ্বংস করেছে।
হামলা হতে পারে—এই আশঙ্কায় কাতারকে আগে থেকেই প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছিল এবং মার্কিন ঘাঁটিগুলো খালি করার নির্দেশও দেয়া হয়।
তাই ইরান কাতারকে জানিয়েছে—'ভাই, আমি তোমার দেশে এই হামলা চালাব। এই হামলায় যেন প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম হয়, সে জন্য তুমি আগেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখো।'
এমনও বলা হচ্ছে—আসলে এই হামলার উদ্দেশ্য ছিল প্রতীকী বার্তা দেয়া—না যে বড় ক্ষয়ক্ষতি করা।
আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলোও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এদিকে ইরাকে অবস্থিত আল-আসাদ এয়ারবেস-এও ইরান মিসাইল হামলা চালিয়েছে বলে খবর এসেছে।
অর্থাৎ একসাথে কাতার এবং ইরাকে এই আক্রমণ হয়েছে।
তবে ইরাকের কর্মকর্তারা বলেছেন, ইরাকের আল-আসাদ বিমানঘাঁটিতে এখনও ইরানের কোনো ড্রোন বা মিসাইল হামলা হয়নি।
যদি কোনো হামলার পর তেলের দাম বেড়ে যেতো, তাহলে বোঝা যেতো পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত।
কিন্তু ইরানের আক্রমণের পর বিশ্ব তেলের বাজারের দাম কমেছে প্রায় ৬%। অর্থাৎ বিশ্ব মার্কেট মনে করছে, এখানে যেটা ছিল একটা ফাঁস, একটা বাষ্প বিস্তার — সেটা এখন ধ্বংস হয়ে গেছে, এবং পরিস্থিতি এখন শান্ত হওয়ার পথে।
এইটা একটা ধরনের নিম্নচাপের মতো, বা ঝড় আসার আগে ঝঞ্ঝার মতো অবস্থা, তারপর ঠান্ডা থাকবে—এমনই একটা ইঙ্গিত দিচ্ছে আন্তর্জাতিক তেল বাজার।
অর্থাৎ, ইরান এই আক্রমণ দিয়ে একটা প্রতীকী বার্তা দিয়েছে। এবার এই আক্রমণের পর হয়তো ইরান ও আমেরিকার মধ্যে কোনো সমঝোতা বা সমঝোতা আসতে পারে।
কিন্তু বারবার যে বিষয়টা সামনে আসে, সেটা হলো ইসরাইল। ইসরাইল কি চায়? ইরানের এই আক্রমণের পরপরই ইসরাইল তেহরানে আঘাত হানিয়েছে।
এদিকে, এই আক্রমণের পর মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ, যেমন কুয়েত, তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে। আরো দুই-তিনটি দেশ তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে যাত্রীবাহী বিমানের চলাচল বন্ধ করেছে।
গালফ অঞ্চলের যতগুলো দেশ আছে, তারা সবাই সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।
কারণ হলো, ইরান বলুক বা বলুক না, যদি এমন কয়েকটি আক্রমণ ঘটে, এবং যদি কোন যাত্রীবাহী বিমানে আঘাত লাগে, তাহলে কী ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হবে তা নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ রয়েছে।
তথ্য অনুযায়ী, তেলের বাজারে দাম ৬% কমে ৬৯.৫ ডলার প্রতি ব্যারেল হয়েছে, যা গত এক সপ্তাহে সবচেয়ে কম।
মধ্যপ্রাচ্যের জটিল রাজনীতি আর ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রতিচ্ছবি। আসলে, এখানে অনেকগুলো ইস্যু ও উদ্বেগ জড়িত:
-
ইরানের পরমাণু প্রকল্প নিয়ে বিশ্বর সর্বোচ্চ শক্তিগুলোর অবস্থান এবং চাপ অনেক আগ থেকেই।— আমেরিকা ও ইসরাইল চাইছে, ইরানের পরমাণু সামর্থ্য পুরোপুরি বন্ধ হোক।— কিন্তু ইরানের প্রতিবেশী বা মিত্র দেশগুলো এখন পরমাণু অস্ত্র সরবরাহের জন্য প্রস্তুত, যা উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।— এটা একটা ঝুঁকিপূর্ণ খেলায় পরিণত হচ্ছে যা পুরো অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করতে পারে।
-
মধ্যস্থতার চেষ্টা ও বিরোধ— চীন এখন শান্তি বজায় রাখার জন্য আগ্রহী, তারা ইরানের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে না দেওয়ার চেষ্টা করছে।— রাশিয়াও একটা নিরপেক্ষ অবস্থান নিতে চাইছে, যদিও তারা ইরানের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ।— তাই দুই বড় শক্তির মধ্যস্থতা থাকলে হয়তো উত্তেজনা কিছুটা কমানো যেতে পারে।
-
অস্ত্রপ্রযুক্তি ও মিসাইলের বিস্তার— এখানে রাষ্ট্রীয় সংগঠন ছাড়াও প্রক্সি গ্রুপ, সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান হাতে মিসাইল রাখছে।— এর ফলে, ছোটোখাটো ঘটনা বড় আকারে রূপ নিতে পারে।— মিসাইল হামলার সম্ভাবনা বেড়ে যায়, যেখানে যেকোনো ভুল হিসেব বড় সংঘাতের সূচনা করতে পারে।
-
ইসরাইলের ভূমিকা— ইসরাইল চায় এই উত্তেজনা বজায় থাকুক যাতে আমেরিকা এবং তারা নিজেদের নিরাপত্তা এবং প্রভাব বজায় রাখতে পারে।— তবে এভাবে যদি বড় সংঘাত ঘটে, তার প্রভাব পুরো মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়বে, যা সবার জন্যই ক্ষতিকর।
সামগ্রিকভাবে:
-
এটা স্পষ্ট যে, কোন এক পক্ষের একক বিজয় বা পরাজয় দিয়ে শান্তি আসবে না।
-
বড় রাষ্ট্রগুলোকে শান্তির জন্য কূটনৈতিক উদ্যোগ নিতে হবে।
-
বিকল্প হিসেবে অস্ত্রবাজি কমিয়ে আলোচনাই সবচেয়ে ভালো পথ।
-
আর প্রাথমিক সতর্কতা ও প্রস্তুতি থাকা জরুরি, যেন ভুলবশত বড় ধরনের সংঘাত এড়ানো যায়।
যাই হোক, এই পরিস্থিতিকে সামনে রেখে সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, বাহরাইন, কুয়েত এবং ইরাক তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে। তেহরানে এখন আক্রমণ হচ্ছে, তাবরিজেও আক্রমণের খবর আসছে। এভাবেই খবরগুলো আসছে। এখনো পর্যন্ত কাতারে অবস্থিত আমেরিকার ঘাটিতে ইরানের আক্রমণে কোনো হতাহতের খবর আসেনি, অর্থাৎ কেউ আহত বা নিহত হয়নি। আমেরিকার সামরিক কর্মকর্তারা বলছেন তারা নিশ্চিত যে তাদের কাছে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী কাতার ছাড়া অন্য কোন দেশের আমেরিকার ঘাটিতে আক্রমণ হয়নি।
প্রশ্ন হচ্ছে, কাতারে আক্রমণটি কি শুধু লোক দেখানো ছিল? কিছুটা লোক দেখানোই বলা যায়। আন্তর্জাতিক টার্মে যাকে বলে ‘রুলস অফ এনগেজমেন্ট’। অর্থাৎ, তুমি আমাকে যেই লেভেলে থাপ্পড় দিবা, আমি তোমাকে সেই লেভেলে থাপ্পড় দেয়ার অধিকার রাখি এবং যদি আমি সমান লেভেলে প্রতিক্রিয়া দিই তাহলে তা সমান হয়ে যায়, তারপর আলোচনা সম্ভব। যেমন আমরা ইরান-পাকিস্তান ঘটনায় দেখেছি, পাকিস্তান থেকে ইরানের উপরে আক্রমণ হয়েছিল, এরপর ইরান থেকে পাকিস্তানের উপরে পাল্টা আক্রমণ। এতে কিছু ঘাটি ও লোক নিহত ও আহত হয়েছিল।
এটাই সর্বশেষ অবস্থা। দেখা যাক আজ রাতে কি হয়। আমরা এমন একটা সময় পার করছি যেখানে প্রত্যেক মিনিটে, প্রত্যেক ঘন্টায়, প্রত্যেক দিনে কয়েক মাসের ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।
বিভিন্ন প্লাপফর্ম থেকে পাওয়া তথ্য মতে - কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের মিসাইল হামলা হলো একটা বড় ইভেন্ট, যা স্পষ্টই আমেরিকার উপর ইরানের প্রতিশোধের অংশ। এর ফলে বিশ্ব রাজনীতিতে এবং মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে বড় ধরণের উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এর পর কী হতে পারে, সেটা কয়েকটা সম্ভাবনা দেখা যেতে পারে:
-
আঞ্চলিক উত্তেজনা বাড়বে: ইরান ও আমেরিকার মধ্যে টানাপোড়েন আরও বাড়তে পারে। পাশাপাশি ইসরাইল, সৌদি আরব, এবং অন্যান্য উপসাগরীয় দেশগুলোর নিরাপত্তা সতর্কতা জোরদার হতে পারে।
-
মোটামুটি পাল্টা পাল্টি আক্রমণ: যেমনটা আগে হয়েছিল, এবারও হয়তো আমেরিকা বা তার মিত্ররা ইরানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক কোনো সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারে।
-
ডিপ্লোম্যাটিক আলোচনার পথ: অনেক বড় দেশ যেমন চায়না, রাশিয়া, এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইস্যুটাকে সরাসরি সামরিক সংঘাতের বদলে কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করতে পারে।
-
তেল বাজারে অস্থিরতা: মধ্যপ্রাচ্যের এই সংকট তেল বাজারে দাম ওঠানামা এবং অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে, যা বিশ্ব অর্থনীতির ওপর প্রভাব ফেলবে।
-
সন্ত্রাসী/প্রক্সি গোষ্ঠীগুলোর ভূমিকা: এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন প্রক্সি সংগঠন বা অরাজনৈতিক গোষ্ঠী আরও সক্রিয় হয়ে পড়তে পারে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করতে পারে।
তাই, পরবর্তী ঘটনাগুলো আন্তর্জাতিক কূটনীতির ওপর নির্ভর করবে—কীভাবে বড় শক্তিগুলো নিজেদের পদক্ষেপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে আর পরিস্থিতি আরও বিকট রূপ না নেয়। আপাতত, সবাই খুব সতর্ক অবস্থায় আছে এবং যে কোনো সময় পরিস্থিতি দ্রুত বদলাতে পারে।
0 Comments:
Post a Comment